“নাস্তিকতা একটি অসুখ। একজন অসুস্থ বা পাগলের প্রতি যেমন মমতা আসা দরকার। তেমনি আপনার আশেপাশে যে নাস্তিক আছেন তার প্রতিও মমতার সাথে তাকানো দরকার।”
– ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, পৃষ্ঠা ১১৩।
“নাস্তিকরা হলো শিশুর মতো। অবুঝ, অপরিণত।”
– ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, পৃষ্ঠা ২২।
বইটির লেখক একজন ডাক্তার। ডাক্তার যেমন রোগীর চিকিৎসা করার সময় রোগীর প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করেন, বইটির লেখকও নাস্তিকদের যুক্তির জবাব দিতে গিয়ে নাস্তিকদের রোগীর হিসেবে দেখে চিকিৎসা করতে চেয়েছেন।
অবুঝ শিশুর মতো তারা যেসব প্রশ্ন করে, মনে হয়েছে লেখক সেই অবুঝ শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। শিশুটি মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করলে লেখক আবার তাকে কখনো ধমকের সুরে আবার কখনো ভালোবাসার সুরে বুঝাচ্ছেন।
বইটিতে মূলত ফোকাশ করা হয়েছে নাস্তিকদের নয় বরং আজ্ঞেয়বাদীদের। যারা এখনো সংশয়ে আছে, অর্থাৎ প্রাথমিক লেভেলের অবিশ্বাসীদের, যারা মাত্র কয়েকটা অভিযোগের জন্য মনে সংশয়ের বীজ উৎপন্ন হয়েছে।
আবার কিছু কিছু প্রশ্ন এমনও আছে যেসব প্রশ্ন মুসলমানদের মনেও ঘুরপাক খায় (ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে ভালোমতো না জানার কারণে) আজ্ঞেয়বাদী বা নাস্তিকদের লেখা পড়ে।
যেমন: দাসপ্রথা, বনু কুরাইযার মৃত্যুদণ্ড, জিযিরা প্রভৃতি।
লেখক এসব বার্নিং ইস্যুগুলো গল্পের আকারে তুলে ধরেছেন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বইটিতে।
বইয়ের নামকরণের স্বার্থকতা বলতে গেলে ১০/১০।
যে আইন সেক্যুলার তথা পশ্চিমারা প্রণয়ন করলে আমাদের দেশীয় সংশয়বাদীরা তথা ইসলাম বিদ্বেষীরা স্বাগত জানায়, প্রায় একই আইন ইসলামে থাকলে তখন দ্বৈত নীতি অবলম্বন করে এর বিরোধীতা করে। লেখক এসব ভন্ডদের দ্বি-মানকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
ক্যারাটেতে একটা নীতি আছে, attack is the best form of defence. লেখক বইটিতে কেবল প্রশ্নের জবাব দিয়েই ক্রান্ত হননি, প্রশ্নকারীর দিকেও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন।
এতোদিন কলাবিজ্ঞানী আমাদের শেখানোর চেষ্টা করতো, স্রষ্টা আছেন সে ব্যাপারে কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। বইটির শুরুর গল্প ‘না দেখে বিশ্বাস: মানবজন্মের স্বার্থকতা’ এটিতে লেখক সেই কলাবিজ্ঞানীদের অবুঝ শিশুর মতো করা প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘স্রষ্টা নেই’ সেই ব্যাপারেও তো কোনো প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, যা পাওয়া গেছে স্রেফ তত্ত্ব!
নাস্তিক বলে দাবী করা ছেলেটি আমতা আমতা করে অন্তত স্বীকার করলো, আমরা অনেক কিছুই না দেখে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করতে বাধ্যও বলা যায়।
বইটির আরেকটা জিনিস ভালো লাগছে, বইটির প্রায় লাইনে লাইনে রেফারেন্স দেবার চেষ্টা করেছেন লেখক। কোনো গল্পে ২৯ টা, কোনোটিতে আবার ৪৪ টা, এভাবে প্রতিটি গল্প রেগারেন্সে ভরপুর!
বইটির প্রচ্ছদটা তো আরো বেশি মিনিংফুল। বাম চোখের চশমা ভাঙ্গা কিংবা গুলি করা হয়েছে। বামপল্লীর মিথ্যাচার তথা দ্বৈত নীতি অবলম্বনে হাস্যকর কাহিনীগুলো পড়ে মনে হয় আসলেই তারা অবুঝ শিশু, রোগাক্রান্ত!
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ আরিফুল ইসলাম