“নীল নক্সা”-একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
নীল নক্সা

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
বই– নীল নক্সা
লেখক– মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ
ঘরানা– মেডিক্যাল থ্রিলার/ মার্ডার মিস্ট্রি
আদী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত 
নীল নক্সা
গল্পটা ডাক্তার থেকে পুলিশ বনে যাওয়া রাফসান ইবনে সেলিমের, প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর এস আই আদনানের, কিংবা কুখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড ডন ওয়াসি এবং তার প্রধান সহযোগীদের। একসময়ের খুলনার ত্রাস ওয়াসি আনোয়ার এবং তার দুই প্রধান সহযোগী নাহিদ হাসান ওরফে নাদু গুন্ডা এবং খন্দকার শুভ থেকে পাইপ শুভ তে পরিণত হওয়া হওয়া আপাত দৃষ্টির পিশাচদের মাফিয়া জগতে উত্থান, ভালোবাসা, টিকে থাকা এবং শেষ পরিণতিই এখানে প্রধান আলোচ্য। যদিও গল্পের শুরুটা ঠিক এমন নয়…

ডন ওয়াসি’র ডান হাত, অনেকে যাকে ডনের মস্তিষ্ক’ও বলে থাকে- নাহিদ হাসান ওরফে নাদু গুন্ডা’র বনানী থানায় আগমন খুব হুট করেই। উদ্দেশ্য আত্মসমর্পণের। ডনের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে সকল অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া। বনানী থানার কনফারেন্স রুমে, কথা বলা শুরু করার আগেই আচমকা মারা পড়ে সে। মৃত্যুর কারণ ধোঁয়াটে। শরীরে কোন আঘাতের লেশ মাত্র নেই। আবার তার থানায় আগমনের ব্যাপারটা অন্য কেউ জানতোও না, যে অন্য কোন উপায়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হবে। এ- মৃত্যুতে সম্ভাব্য বেশ বড় সড় ক্ষতির পরিমাণ দু’টো- এক, ডন ওয়াসি’র বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ জোগাড়ের সম্ভবনাটা গেলো, এবং দুই, এইটা যদি খুন হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে থানার ওসি সৈয়দ মারুফ ফেঁসে যেতে পারেন। অগত্যা ডিআইজি সামিউল ইসলামের একান্ত সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিতে সরেজমিন তদন্তে নামতে হলো এএসপি রাফসান ও তার ছোট ভাই সমতুল্য এসআই আদনানকে।

তদন্তের এক পর্যায়ে জানা গেলো মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে কোমল-মনা দানব সদৃশ নাদু গুন্ডা’কে এক রহস্যময় মহিলার সাথে নাস্তা করতে দেখা গেছে মোহাম্মদপুরের বিখ্যাত এক রেস্টুরেন্টে।
নাহিদ হাসানের সাথে ক্যাথেরিন রোজারিও নামের এই রহস্যময়ীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টা ঠিক যেন মেলে না। কানেকশন বের করতে
রীতিমত হিমশিম খেতে হয় রাফসান ও আদনানকে। এদিকে দৃশ্যপটে ডন ওয়াসি’র প্রধান হিটম্যান খন্দকার শুভ ওরফে পাইপ শুভ’র আগমন নাহিদ হাসানের মৃত্যুর ব্যাপারে ডনের হাত থাকার বিষয়টাই ডিরেক্টলি ক্লেইম করে বসছে। মানসিকভাবে অসুস্থ ডনের এই মাসলম্যান থাকে ঢাকার বাইরে। ঢাকায় তার পা পড়া মানেই ঢাকাবাসীর নতুন কয়েকটা লাশের দেখা পাওয়া। সো ইকুয়েশন ইজ সিম্পল- নিজেকে বাঁচাতে ডন ওয়াসি পাইপ শুভ’কে দিয়ে খুন করিয়েছে নাহিদ হাসানকে। রাফসানেরও মনে একই ধারণা ছিল একেবারে শুরু থেকে। বেসিক্যালি, সে উদগ্রীব হয়ে ছিল খুনটা কিভাবে করা হয়েছিল- এইটা জানার জন্য। যাই হোক, তদন্ত এগিয়ে চলে ঘোড়ার গতিতে।

ঘোড়ার গতিতে এগিয়ে চলা তদন্ত’তে রাফসান ওয়াসি গ্যাং ও এর সংশ্লিষ্ট মানুষজন সম্পর্কে যত বেশি জানতে শুরু করে, রহস্যও ক্রমশ ঘোলাটে হতে শুরু করে। ক্রমান্বয়ে, এই বিশেষ খুনের ব্যাপারে রাফসানের আগের সব হাইপোথিসিস-ই নিস্ক্রিয় হতে থাকে। পেন্ডুলামের দোলাচলে দুলতে থাকা রাফসান এসআই আদনানকে সঙ্গী করে ছুটে চলে রহস্যের গভীর থেকে গভীরতরে। বেরিয়ে আসে এমন কিছু তথ্য যা দেখে কেবল রাফসানই নয়, পাঠকেরাও হয়তো চমকে উঠবে। চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক ‘সেলফ-জার্নি’ লেখকের প্রাঞ্জল বিবরণের সাথে পাঠকের মনে দাগ কাটতে একরকম বাধ্যই বলা চলে। লেখকের অতি সহজে গল্প বলতে পারার সহজাত-ভঙ্গির সাথে তার প্রথম মৌলিক বই “রাত এগারো টা”-র মাধ্যমে প্রথম পরিচয় লাভের পর, “নীল নক্সা”তে তা বেশ ভালোভাবেই পূর্ণতা পেয়েছে বলা চলে। আর হ্যাঁ- মেডিক্যাল থ্রিলার হিসেবে বইটা পড়তে প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম, অন্য অনেকেরই পাওয়ার কথা- মেডিক্যাল টার্ম গুলো নিয়েই যত সমস্যা। তবে শেষমেশ মনে হয় না বুঝতে কারো তেমন সমস্যা হবে- মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ এই ব্যাপারটাকে বেশ সিরিয়াসলিই নিয়েছিলেন মনে হয়। প্রায় সবগুলো টার্মই তিনি অনেক ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন- জীবনে প্রথমবার শোনা টার্ম গুলোকে অপরিচিত মনে হয় নি একবারের জন্যও।

পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Shaon Arafat‎

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে