স্বর্গের সিড়ি/মায়ুং কপাল/হাতিমূড়া…

0
স্বর্গের সিড়ি

জায়গাটা কিছুদিন ধরেই বেশ হাইপড!তাই খাগড়াছড়ি জেলা ট্যুরে আমারও প্ল্যান ছিলো জায়গাটা ঘুরে আসার…

কিন্তু,চিটাগাং থেকে খাগড়াছড়ি ঢুকতে ঢুকতে বেজে যায় ১১ টা…তারপর রিসাং,তারেং আর আলুটিলা ঘুরে এসে বাসস্ট্যাড নামলাম ৩ টায়…

বাসস্টান্ডে নেমেই সবাইকে জিজ্ঞাস করতে থাকলাম জায়গাটা কই? কিভাবে যায়? কেউ বলতে পারে না…! অবশেষ একজন বললো,জামতলী যান,এইখানে একটা মন্দির আছে মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে…
স্বর্গের সিড়ি
মন্দিরে আসলাম ৩:৩০ এ…আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাস করলাম যেয়ে ঘুরে আসতে কত সময় লাগবে…সবাই বললো আজকে আর সম্ভন না কালকে আসেন…কেউ বলে একদিন লাগবে,কেউ বলে ৬-৭ ঘন্টা…! কেউ বলে এখন যেতে পারেন তবে ঘুরে আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে…তখন সবকিছু ছিনতাই হয়ে যেতে পারে…

সব শুনে মনে মনে ঠিক করলাম,আজ যাবোই,যা থাকে কপালে…বিসমিল্লাহ বলে হাটা দিলাম…

১০ মিনিট হাটার পরে চেংগী খাল পড়লো..নৌকায় উঠে জিজ্ঞাস করলাম সিড়িতে যাবো কেউ পথ চেনে কিনা? কপাল ভালো একজনকে পেয়ে গেলাম,সে ওই সিড়ি পার হয়ে পরের গ্রামে যাবে।সে বললো চলেন আমার সাথে,১ ঘন্টা মত লাগবে,যাবার সময় পথ চিনে নেন,আসার সময় অন্ধকার হয়ে যাবে,একাই আসতে হবে…

তাই সই! আল্লাহঅর নামে চলিলাম…যা থাকে কপালে..যাবোই আজকে…কি আছে দেখেই আসবো…!

নৌকা পার হয়ে আমরা তিনজন হাটা শুরু করলাম, ৩:৪৫ এর দিকে…বার বার ঘড়ি দেখছি,আলো থাকতে থাকতে ফিরে আসতে হবে…ট্রেইলে রীতিমত উড়ে উড়ে চলছি…আর দৌড়চ্ছি…বেশ কষ্ট হচ্ছিল,সেই ১১ টায় শেষবার খেয়েছি,সাথে পানিও নেই…অবস্থা খুব খারাপ…

পথ চলছি তো চলছিই,শেষ আর হয় না..বার বার ঘড়ি দেখি,পিঠে ৭-৮ কেজি ওজনের ব্যাগ! পাহাড় বেয়ে চলছি,শুধু উপরেই উঠছি…সে কিছুক্ষন পর পর বলে এইতো চলে আসছি…দূরে আঙুল দিয়ে দেখায়,ওই যে, ওই দেখেন সিড়ি…আমি খালি হু হা করি,কিন্তু কিচ্ছু দেখি না…!

বেলা ৪:১০ বাজতে বাজতেই আকাশ কালো হয়ে এলো,আকাশে বজ্রপাত হচ্ছে,জোরালো বাতাস..ভয় পেয়ে গেলাম এইবার,নাহয় কোনভাবে চলে গেলাম..কিন্তু ফিরবো কি করে!

যাইহোক,এভাবে আরো কিছুক্ষন চলার পর ৪:৩০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে! আহা! শান্তি! উদ্দেশ্য সফল! মাত্র ৪৫ মিনিটে পৌঁছে গেছি! (আমার এই সময় সবার সাথে মিলবে না,আগে অনেকগুলো ট্রেকিংয়ের এক্সপিরিয়েন্স ছিলো,তাই পেরেছি,নরমালি একজনের ১:৩০-২ ঘন্টা লাগবে)

তারপর সিঁড়িতে উঠলাম…উপরে উঠেই চারিদিকে বিশাল সীমানা…স্বর্গে হয়তো এবার পৌছেই যাবো! দারুন অপরুপ এক পরিবেশ…!

সিঁড়িতে কিছুক্ষন দাড়ানোর পরেই বৃষ্টি শুরু হলো…! বৃষ্টি আসলেই শেষ,চারিদিক প্রায় অন্ধকার!আর বৃষ্টিতে ওই পথে নামা অসম্ভব!

পড়িমরি করে ছুটলাম আবার…আবার শুরু হলো দৌড়…ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌছে গেছি,কিন্তু থামলেই শেষ! নিজেকে আবার চ্যালেঞ্জ করার পালা!

কিছুক্ষন পর বৃষ্টি থামলো…এইবার একটু শান্তি পেলাম…নির্জন জঙলের ভিতর দিয়ে দুইজন চলছি,কারো মুখে কথা নেই,মনে শুধু দারূন এক তৃপ্তি!

পাহাড় বেয়ে গ্রামে ঢুকতে ঢুকতেই পুরো অন্ধকার হয়ে এলো। ঘড়ি দেখলাম…মাত্র ৫:৩০ বাজে!মাত্র ৩০ মিনিটে এসেছি! নিজের প্রতি আস্থাটা অনেকখানি বেড়ে গেলো এইবার!

চাইলে সবকিছু সম্ভব…সব! অজানাকে জানার নেশা অন্য রকম,আফিমের চেয়েও ভয়ংকর এ নেশা!

কিন্তু,তবুও আমি ট্রাভেলিং ভালোবাসি…বারবার নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা যায়! আমি কি করতে পারি,তা হয়তো একটু একটু করে বুঝতে পারছি…!

আর আমি ঘুরি কারন আমি চাইনা আমার জীবন আর অন্য সবার মতো হোক! আমি চাই আমার ঝুলিতে হাজার হাজার গল্প থাকুক! মুগ্ধতায় কেটে যাক সবগুলো নির্ঘুম রাত!

খাগড়াছড়ি ডায়েরী,৫৯ তম জেলা।

লেখকঃ Bishan Sadid‎

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে