কনফেশন্স : পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
কনফেশন্স

বইঃ কনফেশন্স।
লেখকঃ কানায়ে মিনাতো।
অনুবাদঃ কৌশিক জামান।
প্রকাশনীঃ বাতিঘর।
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৮৮।
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০টাকা।
কনফেশন্স
স্কুল শিক্ষক মরিগুচি। আজ তাঁর স্কুলের শেষ দিন, শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিচ্ছেন, তাই যে শ্রেণীর শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন, তাদের উদ্দেশ্যেই শেষবারের মতো কিছু কথা বলে যাচ্ছেন তিনি।
একি সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলে স্কুলে “দুধ” খাওয়া কর্মসূচী চলছিলো। এই স্কুলেও সেটা চলমান।
মরিগুচির চাকরি ছাড়ার কারন?
কিছুদিন আগেই তাঁর একমাত্র মেয়ে, যার বাবা কিনা একজন HIV আক্রান্ত, নাম তার মানামি, সুইমিংপুলে ডুবে মারা গিয়েছে। তবে সকলের চোখে সেটি দুর্ঘটনা হলেও, মরিগুচি জানতেন তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, আর হত্যাকারি দুজন এই ক্লাসেই তাঁর সামনেই বসা, যাদের দুধের প্যাকেটে কিনা HIV আক্রান্ত বাবার রক্তের কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে তারা বুঝতে পারে জীবন কত মূল্যবান, যাতে তারা অনুশোচনায় দগ্ধ হয় তাদের কৃতকর্মের জন্য।

এদিকে খুনিদের মধ্যে একজন নিজের মাকে খুন করে বসলো একদিন, ঘটনা মোড় নিতে থাকলো বিভিন্ন দিকে। কেউই তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করতে চায়না, তবে প্রতিশোধ আর ঘটনা প্রবাহ এমন ভাবে এগুতে থাকে যে কেউই তাদের কৃতকর্মের কথা গোপন রাখতে পারেনা, স্বীকার করতে বাধ্য হয়, আর বেরিয়ে আসে সমাজ, পরিবার আর মানুষের মনোজগতের অন্ধকার দিকগুলো।

মূল বইঃ কনফেশন্স আমার পড়া দ্বিতীয় জাপানিজ থ্রিলার। আগেরটা ছিল দ্য ডিভোশন অব সাস্পেক্ট এক্স। এবং এবারেও আমি মুগ্ধ।
পড়ে যা বুঝলাম, জাপানিজ থ্রিলার গুলো গতানুগতিক থ্রিলারের মতো না, এখানে ঘটনাপ্রবাহ বেশ ধীর গতির, কিন্তু প্রতি মুহূর্তে আপনার মাথার ভেতর কিছু প্রশ্ন রেখে সামনে এগিয়ে যাবে। সেই প্রশ্নগুলো সমাজের, ব্যক্তিজীবনের, মনোজগতের নানান দিক নিয়ে, যার পেছনে লুকিয়ে থাকে মানবিক আবেদন, অব্যক্ত বাসনা, তার থেকে জন্ম নেয়া পাপ, পাপের ফলাফল, আর তার অনুশোচনা। থাকে বিভিন্ন অপরাধের বৈচিত্র্যপূর্ণ আঙ্গিক, মনুষ্য মনোভাব, আর তার বাস্তব প্রতিফলন। ঠাণ্ডা, একটা হিমশীতল অনুভূতি, ধীরে ধীরে যেটা একটা স্নায়ু চাপে পরিনত হবে, এটাই হচ্ছে এই বইয়ের, তথা জাপানিজ থ্রিলার বইয়ের মূল লেখনশৈলী।

এই বইতে উঠে এসেছে কিশোর বয়সের মোনজগত, বয়স আর পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব, পরিবার আর প্রযুক্তির করাল গ্রাস, বস্তুবাদে ঝুঁকে পড়া সমাজের এক খণ্ড তৈল চিত্র। যে সমাজ, যে বস্তুবাদ বর্তমান বিশ্বকে শাসন করছে, তৈরি করছে মানব সভ্যতা আর মানুষের মনস্তত্ত্ব। এই সংস্কৃতি, এই প্রভাব কোন দেশ কিংবা সীমানায় সীমাবদ্ধ নেই, তথ্য প্রযুক্তি আর অন্তঃজালের প্রভাবে পৃথিবীর সকল সভ্যতা আর সমাজ আজ এক তলে অবস্থান করছে। যেখানে আজ পরিবার প্রথা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভেঙ্গে গেছে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর মাঝের অদৃশ্য দেয়াল, যে দেয়াল ছিল সন্মানের, যে দেয়াল বন্ধুত্ব আর ভয়ের মিশ্রনের।

অনুবাদঃ অনুবাদক কৌশিক জামানের করা এটাই প্রথম অনুবাদ আমি পড়লাম। অনুবাদের ক্ষেত্রে কিছুটা অবশ্যই বাছবিচার করি, সবার অনুবাদ ভালো লাগেনা, হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া, এবং কৌশিক জামান সেই কয়েকজনের মধ্যে স্থান করে নিলেন, সে কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি। কারন?
অনুবাদের সাবলীলতা, আরও একটি ব্যাপার আমাকে মুগ্ধ করেছে, এই বইয়ের লেখনীতে একটা গাম্ভীর্য লেগে আছে একদম শুরু থেকে, বাক্যের গঠন প্রক্রিয়াটা একটু গুরুগম্ভীর, গতানুগতিক থ্রিলারের মতো না এবং এই বইয়ের বিষয়বস্তুর সাথে যেটি যথার্থ, অনুবাদক সেই গাম্ভীর্য পূর্ণমাত্রায় বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। খুব মনোযোগ দিয়ে না পড়লে আপনি পরের লাইনের মর্ম বুঝতে আবার পেছনে যেতে হবে, আর এমন একটা বইয়ের অনুবাদ সুখপাঠ্য করাটা একটু কঠিন বোধকরি, যেমনটা পাওলো কোয়েলহোর বইগুলো। বইয়ের প্রুফ রিডিং বেশ ভালো হয়েছে, প্রিন্টিং মিস্টেইক নেই বললেই চলে। প্রচ্ছদটাও ছিমছামের মধ্যে দারুন ছিল।
তবে দুটো জায়গা, “হুদাই” আর “একদম ভইরা দিছি”, এই দুটো জায়গায় ভালো লাগেনি, এগুলোর বদলে সম্ভবত অন্য কিছু ব্যাবহার করাই যেতো।

পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Foysal Khan‎

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে