বইয়ের নামঃ The Kite Runner (দ্যা কাইট রানার)
লেখকঃ খালিদ হুসেইনি
প্রকাশকালঃ মে, ২০০৩, রিভারহেড বুকস
(অনুবাদঃ ইয়াসির মনন, প্রকাশিতব্য-জানুয়ারি ২০১৮, বইপোকা প্রকাশনা)
গুডরিডস রেটিংঃ ৪.২৬ / ৫.০০
যিনি লিখেছেন, তাঁর সম্পর্কে তথ্যঃ খালিদ হুসেইনি ১৯৬৫ সালে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ এ প্যারিসে বাবার ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় খালিদ সহ পুরো পরিবার সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ১৯৮০ সাল থেকে। দশ বছরের বেশী সময় ধরে মেডিসিনের উপর প্র্যাক্টিস করলেও ছোটবেলা থেকে লেখালেখির ঝোঁক ছিল, সেটার ফসল ,তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘দ্যা কাইট রানার’। ‘এ থাউজেন্ড স্প্লেনডিড সানস’ লেখকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস । স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বর্তমানে বাস করছেন তিনি।
অল্প অল্প বইটির গল্পঃ আমির, এক ধনাঢ্য কাবুল ব্যবসায়ীর ছেলে, আর হাসান, আমিরের বন্ধু। কিন্তু পরিচয় এখানেই শেষ না , এই বন্ধুত্বের মাঝে ছিল মালিক আর দাসের একটা পার্থক্য, ছিল জাতের বৈষম্য। নিজের জন্মদিনে হাসানের সাহায্যে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় জিতে যায় আমির, আর সেদিন হাসানের সাথে ঘটে যায় আরও এক ঘটনা, যে ঘটনার কারণে নিজ ইচ্ছায় বন্ধুত্ব ত্যাগ করে আমির…
তখন কাবুলে চলছিল রাশিয়ানদের আগ্রাসন। ছেলের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে তাই আমিরকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে আমেরিকায় চলে যান তার বাবা, আর পেছনে স্মৃতি হয়ে থেকে যায় হাসান। কিন্তু আসলেই কি শুধু স্মৃতি হয়েছিল সে আমিরের কাছে? আসলে, অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল আমিরের কাছে জন্মদিনের বিকালে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা, যার কারণে অনেক বছর পর্যন্ত নিজেকে মাফ করতে পারেনি আমির । কিন্তু কতোদিন?
এক সকালে ফোন আসে আমিরের কাছে, বাবার বন্ধু রহিম, সুদূর পাকিস্তান থেকে অসুস্থ অবস্থায় ফোন দিয়েছেন তিনি আমিরকে। কারণ ? আমির ভেবেছিল কারণ হল হাসান, কিন্তু তাঁকে পাকিস্তানে ডাকার আসল কারণ ‘হাসান না’, হাসানের ছেলে ‘সোহরাব’ … আরও একটা কারণ আছে, রহিম ফোন রাখার আগে আমিরকে বলেছিলেন ‘ভালো হওয়ার একটা সুযোগ আছে আমির’ …
আর এগিয়ে যেতে থাকে গল্প …
#কিছু_কিছু_প্রিয়_লাইন / উক্তিঃ
“When you kill a man, you steal a life. You steal a wife’s right to a husband, rob his children of a father. When you tell a lie, you steal someone’s right to the truth. When you cheat, you steal the right to fairness. There is no act more wretched than stealing.”
আর এটা ছিল হাসানের উক্তিঃ “For you, a thousand times over.” ,
বন্ধুদের এমনই হওয়া উচিৎ , তাইনা ?
অভিব্যাক্তি তথা পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ কি এমন ঘটনা ঘটতে পারে তাঁদের (হাসান ও আমির) মধ্যে? এটাতো অবশ্যই বইটা পড়লে জানা যাবেই, কিন্তু, আমার মূল বক্তব্য সেখানে না। কখনও কল্পনা করে দেখতে পারেন একটা ছোট্ট বিষয়? আপনার একটা বন্ধু , লেখাপড়া জানেনা, কিন্তু আপনার সব কাজের সঙ্গী ছিল সে, আর আপনি তাকেই খারাপ বানিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন? তবুও সেই বন্ধু অপেক্ষা করেছে আপনার জন্য? নিজে নিজে কষ্ট করে লেখা শিখে প্রথম চিঠি আপনাকেই লিখেছে? কল্পনা করা যায় কিছুটা? ভাবতে পারেন বিষয় কি হতে পারে সেই চিঠির?
এই ভাবনাটা, আমি আমাকে দিয়ে জাজ করেছি। এখানেই হয়তো লেখকের সার্থকতা ছিল। নিজেকে খুঁজে পেয়েছি গল্পের প্রতি পাতায়, বন্ধুত্ব দেখতে পেয়েছি। আর আমার মতে, যাদের বন্ধু আছে , তারাও হয়তো একই কথা বলবেন বইটি পড়লে। আমার প্রথম মৌলিক উপন্যাস ছিল, ‘প্রশ্ন তারও কমন পড়েছিল’, এই গ্রুপের অনেকেই পড়ে বলেছিলেন যে, তাঁরা বইটি পড়ে কেঁদেছেন। এমন কি অনেক বড় বড় রাইটারের অনেক বই অনেকেই হয়তো পড়েছেন, যেটা পড়ে কান্না আসে। কিছুটা বড়াই করে বলছি, আমি পারসোনালি কোনও বই পড়ে কাঁদিনি, তবে অনেক বই পড়েই মন খারাপ হয়েছে, কষ্ট পেয়েছি। আর সেই বইগুলির লিস্ট যদি করা হয়, তবে এই বইটি সেই লিস্টের উপরের দিকেই থাকবে।
আরেকটা কথা, মূল কাহিনীর সাথে অনেকটা ওতপ্রোত ভাবেই যুক্ত আছে তৎকালীন আফগানিস্তানে রাশিয়ার যুদ্ধের কথা, তালিবানদের অত্যাচারের কথা। সেই দৃষ্টিতে, বইটি পড়ে বাড়তি অনেক কিছু জেনেছি, তাই এবারও ধন্যবাদ যায় লেখক বরাবর।
এই বইয়ের অনুবাদ যে আমি করছি, ইন্ডাইরেক্টলি উপরে তা লাইনের চিপায়ে দিয়ে দিয়েছি, সেজন্য দুঃখিত । শুধু এতোটুকুই বলার আছে , অনুবাদ পড়েন আর না পড়েন, মূল বইটা হলেও পড়েন। খারাপ লাগবেনা
Yasir Monon