বই: The Manuscript Found In Accra
লেখক: Paolo Coelho
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১৮২
প্রকাশনী: HarperCollins publishers India
মুদ্রিত মুল্য: ২৯৯ রুপি
১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দ, জেরুজালেম নগরীর চারপাশ ঘিরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ক্রুসেডাররা। নগরীর সকলের মধ্যে হয়ত স্রষ্টার সর্বোত্তম উপাসনাপদ্ধতি নিয়ে নানা মতবিরোধ রয়েছে, কিন্তু তা কখনো তাদের সুন্দর জীবনযাপনে করাঘাত করেনি। আজ যখন তাদের নগরী অবরুদ্ধ আর তারা জানে যে তারা কখনই মুক্তি পাবেনা। তাদের নগরীর সৈন্যরা একটা শেষ লড়াই করবে, কিন্তু জয় আশা করে লাভ নেই। এই আক্রা নগরী অবরুদ্ধের বিকেলে, নগরীর সকলে এক বৃদ্ধ গ্রীকের কাছে জড়ো হচ্ছে। গ্রিকের নাম কপ্ট। কৈশোরে কপ্ট তার বাড়ি ছেড়ে ভ্রমন আর জ্ঞানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো। কিন্তু অসুস্থ, মৃতপ্রায় ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় জেরুজালেমে পৌছায়। সেই থেকে এখানেই তার বাস। সে ঠিক কোন ধর্মে বিশ্বাসী কেউ জানে না। জানতেও চায় না। কিন্তু তার রয়েছে জ্ঞান।
আজ কপ্ট সকলকে তাদের মনের ভয়ের কথা জানাতে বলে। সম্ভবত কিছুটা হলেও সে এর জন্য সান্ত্বনা দিতে পারবেন।
তাই একের পর এক সকলে প্রশ্ন করতে থাকে। প্রতিটা প্রশ্নই মুলত তাদের মনের ভেতরকার ভয় ও অনিশ্চয়তার প্রকাশ। ১৯ জন মানুষ মোট ২০ টি প্রশ্ন করেন। আর সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর কপ্ট খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে ফিরিয়ে দেন। বিজয়, পরাজয়, ভবিষ্যৎ, সেক্স, ভালোবাসা, বিশ্বাস, শত্রু, নিঃসঙ্গতা, স্নিগ্ধতা, বীরত্ব এইসকলই থাকে প্রশ্নগুলোর মুখ্য বস্তু।
বইটি আমার কেনা পুরোনো বইয়ের দোকানে। খুবই সুন্দর একটি প্রচ্ছদ। প্রতিটা কোনায় কোনায় সোনালী চকচকে ইলাস্ট্রেশন সব মিলিয়ে ধরতেই একটা চমৎকার আনন্দ লাগে। বিশেষত ম্যানুস্ক্রিপটটি প্রায় ৭০০ বছর অনাবিষ্কৃত থাকে। ঠিক ১৯৪৫ সালে উত্তর মিশরের হামরা ডম নামে এক পাহাড়ের গুহায় দুই ভাই এই ম্যানুস্ক্রিপট আবিষ্কার করে। স্থানীয় আইন অনুযায়ী ম্যানুস্ক্রিপটগুলোকে যাদুঘরে দিয়ে দেয়ার বলে এন্টিক হিসেবে তারা এগুলো বিক্রি করে দেয়। অনেক চেষ্টার পর মিশরীয় সরকার এই ম্যানুস্ক্রিপট উদ্ধার করে ১৯৫২ সালের মধ্যে এবং একে জাতীয় সম্পদ আখ্যা দেয়। ইতিমধ্যে এই ম্যানুস্ক্রিপ্টের অনেকগুলো কপি খুজে পাওয়া যেতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই কপিগুলো ১৩০০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে লেখা। মুল কপিটা মিশরীয় যাদুঘরেই আছে। পাওলো কোয়েলহোর এক পরিচিত বন্ধু তাকে এই ম্যানুস্ক্রিপ্টটি দেন এবং পাওলো কোয়েলহো একে উপন্যাস রুপ প্রদান করেন। মুলত পর্তুগীজ ভাষায় বইটি প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে ইংরেজীতে রুপান্তরিত হয়।
এটাকে ঠিক উপন্যাস বলা যায়? আমার জানা নেই। আমি এতটা জ্ঞানী নই। তবে আমার মনে হয়েছে না। এটি উপন্যাস নয়, এটি একটি অবরুদ্ধ, বিধ্বস্ত ও হারিয়ে যাওয়ার মুখোমুখি শহরের মানুষের ভয়, চিন্তার প্রকাশ। কপ্ট শুধু এটাই বলেছেন বারবার, “আমি আমার জীবনের শেষ মুহুর্তে এসেছি। কাল কি হবে তা আমরা অনুমান করতে পারি। আমাদের সৈন্যরা কাল চেষ্টা করবে ওদের দমানোর। সৈনিকের নিয়তিই সেটা। কিন্তু যারা এই নগরী থেকে পৃথিবীর প্রতিটা কোনে কোনে রওয়ানা দিবে, তাদের উচিত আমার এই কথাগুলো, আমাদের ভয়ের উত্তরগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়া। যাতে অদুর ভবিষ্যত পর্যন্ত মানুষ নিজের ভয়গুলোকে চিনতে পারে। এভাবেই আমাদের নগরীর কথা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে চলবে।”
পাওলো কোয়েলহোকে আমার একজন দার্শনিক বলেই মনে হয়। জীবন একটা বিরাট যাত্রা। এই কথাটাকে উনি ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন প্রতিটা মুহুর্তে। বিশ্বাস, জয়, পরাজয় বা সবকিছুর উৎপত্তির পিছনেই আছে ভালোবাসা। একজন মানুষ যদি তার বইগুলো পড়ে তাহলে কিছু কিছু জিনিস সম্পর্কে খুবই ভিন্ন দৃষ্টিকোনের স্বচ্ছ ধারনা পাবে। এতটা সহজ ভাষায় কিছুর প্রকাশ খুবই কঠিন। এই কঠিন কাজটুকু এই শক্তিমান লেখক খুবই ভালো পারেন। কথাগুলো খুবই সহজ, কিন্তু এই কথাগুলোকে ভাষান্তর করে বলাটা আমার কাছে খুবই কঠিন মনে হয়েছে। প্রকৃতির সবকিছুর পেছনে এক অদৃশ্য শক্তিমান হাত রয়েছে এবং তার কাছাকাছি পৌছানোর জন্য আমাদের স্বচ্ছ হতে হবে। তিনি পরাজয় ও ব্যর্থতার মধ্যকার এক গভীর বিশাল দাগ টেনেছেন। তবে এই বইটিও আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগেনি। তার কথাগুলো সুন্দর, বলাটা ভালো, বিষয়ভঙ্গী খুবই উন্নত ও গভীর এবং বিশাল। কিন্তু এই বইয়ে কাহিনী নেই। একজনের পর একজন প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর কপ্ট উত্তর দিচ্ছেন। আক্রা নগরীর ভবিতব্য জানা সম্ভব হয়নি।
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Amirul Abedin Akash