বই : মায়া মন্দির
মাসুদ রানা – ৪৫১
লেখক : কাজী আনোয়ার হোসেন
সহযোগী : কাজী মায়মুর হোসেন
প্রকাশক : সেবা প্রকাশনী
প্রকাশকাল : ২০১৭
ঘরানা : পলিটিক্যাল/এসপিওনাজ/হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার
পৃষ্ঠা : ৩৬৮
প্রচ্ছদ : রনবীর আহমেদ বিপ্লব
মুদ্রিত মূল্য : ১২৯ টাকা
বাঙালি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফিজিসিস্ট মিতা দত্তকে কিডন্যাপ করা হলো। ভয়াবহ আহত হলেন প্রখ্যাত আর্কিওলজিস্ট জর্জ হ্যারিসন। সমস্ত গৎবাঁধা রীতিনীতি উপেক্ষা করে একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই মাসুদ রানা’র সাহায্য চাইলেন এন আর আই চিফ জেমস ব্রায়ান। কন্যাসম মিতাকে উদ্ধার করার জন্যই তাঁর এই উদ্যোগ। আর এসব ক্ষেত্রে এম আর নাইন সচরাচর যা করে থাকে, সেটাই করলো। ঝাঁপিয়ে পড়লো মিতা দত্তকে উদ্ধারের কাজে।
সারা পৃথিবীর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড খুব অদ্ভুত আচরণ করছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, হাজার বছর আগে মায়ান সভ্যতার জাগুয়ার রাজার প্ল্যান্ট করা অদ্ভুত কিছু স্ফটিকের সাথে এই ঘটনার অদ্ভুত যোগাযোগ আছে। বছর খানেক আগে আমাজনের গভীর থেকে মাসুদ রানাই উদ্ধার করে এনেছিলো বিতর্কিত ব্রাজিল স্টোন। মাঝে মাঝেই সেটা থেকে বিকিরিত হচ্ছে উচ্চমাত্রার শক্তি। কারণটা অজানা। আর এই ব্যাপারটা নিয়েই সি আই এ চিফ মার্ল ক্যালাগু ও এন আর আই চিফ জেমস ব্রায়ানের মধ্যে চলছে তীব্র স্নায়ুযুদ্ধ। এক্ষেত্রে অবধারিতভাবে যা হয় তাই হলো। স্বয়ং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জড়িয়ে গেলেন এসবের সাথে। পতিত হলেন অদ্ভুত এক শাঁখের করাতে।
হুয়াং লি ল্যাং নামের এক চিনা বিজনেস টাইকুন মরিয়া হয়ে উঠেছে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডে প্রভাব সৃষ্টিকারী এই স্ফটিক পাওয়ার জন্য। এজন্য সে তৈরি করেছে হাইটেক এক সেনাবাহিনী আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর অত্যাধুনিক নেটওয়ার্ক। ওটা পাওয়ার জন্য খুন করতেও দ্বিধা করছেনা ল্যাং। আর সেই সাথে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো উদয় হয়েছে রাশান ইন্টেলিজেন্স। সিনিয়র এজেন্ট ইগোর দিমিতভ সদলবলে নেমে পড়েছে মাঠে। রাশান বিজ্ঞানীদের এককালের ‘গিনিপিগ’ পাবলো নামের এক বাচ্চা ছেলেকে কব্জা করাই যার মিশন। আর নিয়তিও বড় অদ্ভুত। পাবলোকে একই সুতায় বেঁধেছে মাসুদ রানা, মিতা দত্ত আর আর্কিওলজিস্ট জর্জ হ্যারিসনের সাথে।
ঘটনাচক্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার উপক্রম হয়েছে তিন সুপারপাওয়ার দেশের মধ্যে। আমেরিকা, চিন আর রাশিয়া একে অপরের ঘাড়ে ফেলছে নিজেদের তপ্ত নিশ্বাস। আর এই সবকিছুর মূলেই রয়েছে অদ্ভুত আর বিভ্রান্তিকর এই স্ফটিক। শেষমেশ পুরো পৃথিবীর অস্তিত্বই হয়ে পড়লো বিপন্ন। আর পৃথিবীকে রক্ষা করার গুরুদায়িত্ব এসে পড়লো মাসুদ রানা’র কাঁধে। গুয়াতেমালার দুর্গম এক মায়ান সাইটে জমে উঠলো শেষ খেলা। উত্তেজনার পারদ হলো ঊর্ধ্বগামী।
ব্যক্তিগত মতামত : বেশ অনেকদিন পর মাসুদ রানা সিরিজের কোন বই পড়লাম। ‘মায়া মন্দির’ বইটা অনেকটা দ্বিধা নিয়ে শুরু করেছিলাম। ভালো লাগবে কিনা এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো, অস্বীকার করবোনা। তবে বইটা শেষ করেছি অসাধারণ এক তৃপ্তি নিয়ে। টানটান উত্তেজনাকর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই শেষ করেছি ‘মায়া মন্দির’।
স্ফটিকের সন্ধানে মায়ান সাইট গুলোতে মাসুদ রানার অভিযান যথেষ্ট উপভোগ করেছি। পদে পদে বিপদের হাতছানি শিহরিত করেছে বারংবার। ইদানীং কালের রানা কাহিনি গুলো দুই খণ্ডের বদলে এক খণ্ডেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাতে পৃষ্ঠাসংখ্যা কিছু বাড়ছে। আমার মনে হয়, এটাই ভালো। দ্বিতীয় খণ্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছেনা আর যাই হোক। ‘মায়া মন্দির’ বইটা এক খণ্ডে সমাপ্ত হলেও, কোন কমতি চোখে পড়েনি আমার।
অনেক বকবক করলাম। এবার শেষ করি। মাসুদ রানাকে চিরচেনা রূপে ফিরে পেতে চাইলে পড়ে ফেলুন ‘মায়া মন্দির’। পড়া শুভ হোক।
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Mahdi Mahi