এক রোম্যান্টিক ও স্মার্ট শহরে ভ্রমণ

0
খুলনা ভ্রমণ

আমার এই কথা শুনে হয়ত ভ্রমণ পিপাসুরা ভাবছেন আমি এ কোন শহরের কথা বলছি? কেউ কেউ মতবিরোধীতা করলেও আমি এই নগরীকে রোম্যান্টিক ও স্মার্ট শহর হিসেবেই আখ্যায়িত করছি।
খুলনা ভ্রমণ
আমি বলছি খুলনা নগরীর কথা। সত্যিকারে এটি একটি রোম্যান্টিক,স্মার্ট এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে উঠা এক শহর। দেশের যখন রাজধানী ঢাকাকে কিংবা ঢাকার মানুষ গুলোর ফ্যাশন,কালচারের দিকে অন্য জেলা গুলো অনুসরণ করতো ঠিক তখন থেকেই এই নগরী নিজস্ব কালচার ফ্যাশনে গড়ে উঠা ঢাকারই মত এক শহর। মিল কারখানা সহ বহু শিল্প কর্মসংস্থানে ভরপুর ছিল এই নগরী আর এরই কারনে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ কর্মক্ষেত্রে সেখানে স্থান গড়েছিল।

জেলাটিতে ধূলাবালির পরিমাণ খুবই কম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। সাজানো গোছানো গ্রাম শহরে মিলিত এক নগরী। শহরের পাড় দিয়ে বয়ে চলেছে ভৈরব ও রূপসা নদী। একাধিক স্টার মানের আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। বিকেলে সময় কাটানোর জন্য অনেক স্থান আছে যেখানে আপনার মন ভাল হয়ে যাবে। সবুজ ঘাসে পরিবেষ্টিত নদীর পাড় আবার কোথাও সাড়িসাড়ি নারিকেল বাগানের পাশে বড় বড় পুকুর কিংবা মাছের ঘের যেন মৃদু বাতাসে প্রশান্তি মিলবে। বিশেষ করে যারা ঢাকার মত যান্ত্রিক শহরে বসবাস করে তিক্ত তাদেরতো মন ভরে যাবে। এমনকি আপনি যদি লং ড্রাইভের জন্য ফাঁকা কোন রাস্তা চান সেটিও একাধিক পাবেন। আর বিশেষ করে যদি নিজের ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেড় হয়ে চলে যেতে পারেন রূপসা ব্রিজের পাড়ে অথবা বাগেরহাটের ষাট গুম্বুজ মসজিদ কিংবা খান জাহান আলী মাজার তাহলেতো কথাই নেই। সব মিলে আপনার ভালোই লাগবে এটি আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি।

এই জেলাটিতে দেশের প্রথম শ্রেনীর অনেক নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা থেকে শুরু করে বহু খেলোয়াড়ের জন্ম। সুন্দর সুন্দর স্মার্ট ছেলে মেয়েদের মাঝে আপনি গেঁয়ো হিসাবে কাউকেই উপাধি দিতে পারবেন না। সংসারে অর্থনৈতিক হাজার সমস্যা থাকলেও তাদের চালচলন কিংবা পোশাকে সেটি প্রকাশ পায়না। তবে জেলাটির মানুষ গুলোর কেউ কেউ একটু চাপিস্ট শ্রেনীর হয়ে থাকে :p (এটি মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও আছে তাদের)। স্থানীয় মানুষ গুলো কিছুটা অহংকারী বলতে পারেন যার কারনে তাদের হাজার সমস্যা থাকলেও একজন অন্য জনের কাছে নিজের দূর্বলতার কিছু শেয়ার করেনা এমনকি সাহায্য চায় না।

দেশের অনেকেই এই শহরটিকে সন্ত্রাসী নগরী হিসাবে জানেন। তবে এখন তেমন কোন বড় সন্ত্রাসী আর নেই। এক সময় জেলাটিতে অনেক বড় মাপের সন্ত্রাসী ছিলো তবে তারা বেশীরভাগ এক সন্ত্রাসী আর এক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধেই ত্রাস করতো। সাধারণ মানুষের নির্যাতিত হওয়ার পরিমাণ খুবই নগণ্য ছিল। দলীয় ছাড়াও নদীর ঘাট কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হতো যা থেকে সাধারণ মানুষের ভয়ের কোন কারন ছিলনা।

সাগর,নদী ও মাছের ঘেরের তাজাতাজা সুস্বাদু মাছ খেতে চাইলে অবশ্যই একবার আপনাকে খুলনা যেতে হবে আর যদি চুইঝাল দিয়ে রান্না গরুরমাংস হয় তাহলেতো কোন কথাই নেই। স্বল্পআয়ে ভাল খেয়ে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করার এক নগরীর নাম খুলনা। ঢাকার মত আয়ে সেখানে আপনি রাজকীয় জীবনযাপন করতে পারবেন।

একসময় লোকায়রণ্যে ভরা জেলাটি এখন অনেকটা ফাঁকা। যদিও এই জেলার মানুষ অনেক পরেই ঢাকাকে বদ্ধ নগরী করতে এসেছে তবে ঈদের সময় আবার তার আগের চেহারা খুঁজে পায়। সবমিলে আপনি খুলনাকে কেন্দ্র করে এর আশেপাশের জেলার অনেক প্রসিদ্ধ স্থান ভ্রমণ করতে পারবেন যার মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। সুন্দর একটি শহর ভ্রমণ করুন আর আমার মত এসে মন খুলে লিখুন 🙂

ভিডিও ধারণ স্থানটি ৭নং ঘাট (মোসলেমের ঘাট নামে পরিচিত) যেটি জোড়া গেট রেললাইনের পাশ দিয়ে যাওয়া যায়।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে দুইদিক দিয়ে বাসে যেতে পারেন। ঢাকা টু পাটুরিয়া পদ্মানদী ঘাট পাড় হয়ে ফরিদপুর মাগুরা যশোর হয়ে খুলনা অথবা ঢাকা টু মাওয়া ঘাট পাড় হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানা হয়ে গোপালগঞ্জের উপর দিয়ে বাগেরহাট হয়ে খুলনা। দুই পথেই এখন ভাল ভাল বাস চলে তবে আমার মতে পদ্মা নদী পাড় হওয়ার বড় রকমের ঝামেলা এড়াতে চাইলে ট্রেনেও যেতে পারেন।

লেখকঃ Miah Mizanur Rahman Kazol