ঘুরে এলাম কলকাতা, দিল্লী, সিমলা এবং মানালী

0
ঘুরে এলাম কলকাতা, দিল্লী, সিমলা এবং মানালী

ঘুরে এলাম কলকাতা,দিল্লী,সিমলা,মানালী,,আমার মোট খরচ হয়েছে ঢাকা টু ঢাকা ট্রাভেল ট্যাক্স সহ প্রায় ২০০০০ বাংলাদেশী টাকা।

একটু বিলাশী ট্যুর ছিল আমার জন্য তাই খরচ একটু বেশী হয়েছে,আবার কিছু কষ্ট ও সজ্যহ করতে হয়েছে । তবে যে কেউ এই ট্যুর আরো অনেক কমে দিতে পারবেন।
ঘুরে এলাম কলকাতা, দিল্লী, সিমলা এবং মানালী
আমার র‍্যুট ছিলো : ঢাকা – কলকাতা – দিল্লী – কাল্কা – সিমলা -কুল্লু – মানালী – দিল্লী -কলকাতা – ঢাকা।
আমি কিছুদিন আগে গতকালের সিমলা ও আজকের সোলাং ভ্যালী নিয়ে ২ টা পোস্ট করেছিলাম তাতে অনেকে ডিটেইলস জানতে চেয়েছে,,
আমি লেখালেখি করি না,তাই ভুল হলে মাফ চেয়ে নিচ্ছি,,এবং সংখেপে ডিটেইলস দিচ্ছি।
আমার ট্যুর এর সময়কাল ছিলো ৪তারিখ থেকে ১৫ তারিখ।

প্রথমে সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স দেই,ফেরিঘাট জ্যাম এরানোর জন্য ৪তারিখ রাতের ৪৫৫ টাকা দিয়ে চিত্রা এক্সপ্রেস এর ঢাকা টু যশোর এর টিকিট কাটি। ৫ তারিখ যশোর নামি রাত ৪.৩০ এ, স্টেশন এর বাইরেই বেনাপোল এর প্রথম ট্রিপ এর একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, ৫.৩০ এ ছারে। ৬.৩০ এর মধ্যে বেনাপোল। ইমিগ্রেশন পার হয়ে এবার রুপির হিসাব শুরু – ৩০ রুপি অটো ভাড়া দিয়ে বনগাঁ স্টেশন যাই, ওখান থেকে ১৫ রুপির টিকিট কেটে দমদম স্টেশন যাই, টারপর দমদম থেকে মেট্রো তে করে ১০ রুপি দিয়ে এসপ্ল্যানেড বা ধর্মতলা যাই । ওখান থেকে ৬ রুপি বাস ভাড়া দিয়ে সরাসরি চলে যাই ফেয়ারলী প্লেস। যেখানে বিদেশী কোটায় টিকিট করা যায়। ওই দিনেরই কলকাতা টু দিল্লী দুরন্ত এসি এক্সপ্রেস এর সন্ধ্যা ৬.৩০ এর টিকিট করি, আবার দিল্লী টু কলকাতা ফেরত আসার ১৪ তারিখ এর রাজধানী এক্সপ্রেস এর টিকিট ও করে রাখি,,এটা আপনি দিল্লী থেকেও করতে পারবেন,,আমি কলকাতা থেকে করেছি আমার ব্যাক্তিগত সভাবের কারনে,,নইলে আসতে মন চাইবে না,,আরো থেকে যাবো। টিকিট এ মোট আসা যাওয়া মিলিয়ে ৫৫০০ রুপির মত যায়, এই টিকিট এ খাবার সহ দাম রাখা হয়,,কম্বল,বালিশ সবই এ দেয়া হয়। ট্রেন কুয়াশার জন্য দিল্লী পৌছাতে ১০ ঘন্টা দেরি করে,৬ তারিখ রাত ১০ টায় দিল্লী নামায়,ওখান থেকে সরাসরি পাহারগঞ্জ চলে যাই, ৫০০ রুপি দিয়ে হোটেল নেই। হোটেল এ ফ্রেশ হয়ে আবার আসি স্টেশন,বিদেশী কোটায় ৭ তারিখ সকালের দিল্লী টু কাল্কা শতাব্দী এক্সপ্রেস এর টিকিট করি ৮০০ রুপি,ফুল এসি,,সকালের নাস্তা সহ এই দাম।

৭ তারিখ দুপুরে কাল্কা পৌছাই, স্টেশন এর পাসেই টয় ট্রেন,উঠে বসি,,সিমলাতে অতিরিক্ত বরফ পড়ার কারনে টয় ট্রেন তিনবার বাতিল হয়,, আমার ৫০ রুপি আর ফেরত পেলাম না,তারপর আরো ২ টা গ্রুপ এর সাথে ৪২০০ রুপি দিয়ে জিপ রিজার্ভ করি মোট ৯ জন হই আমরা,,আমার ভাগে ৪৬৬ রুপি পরেছিলো। অতিরিক্ত স্নোফল র ভারী বরফ এর জন্য পুরো কাল্কা টু সিমলা রোড এ গাড়ী ধিরগতিতে চলে,,আর জ্যাম এর কারনে পৌছাতে পৌছাতে রাত ১.৩০,,তাও গারি ৬-৭কি মি,আগে ছেরে দেয়,,বরফের কারনে গাড়ি আর যেতে পারছিলো না,,তাপমাত্রা -২, রাতের অন্ধকারে নরম বরফে ভুলে পা রাখলে হাটু পরজন্ত দেবে যায়,, তবে সে এক অন্য ফিলিংস। আমাদের হোটেল বুক ছিলো না,,অচেনা শহর, তার মধ্যে পুরো সিমলাতে ২ দিন ধরে কারেন্ট নেই,,আমার জীবনে মাইনাস তাপমাত্রায় এমন একটি রাত পার করতে হবে কল্পনাও করি নি,,মল রোড এ গিয়ে দেখি আমাদের মত আরো শত শত মানুষ,, হোটেল বুকিং দিয়ে এসেও তাদের লাভ হয় নি,আগের কোন ট্যুরিস্ট গাড়ি সিমলা থেকে না চলার কারনে সিমলা ছারতে পারে নি,,কোন হোটেল এ খালি নেই,,আমি অনেকগুলো হোটেল এ অনেক বিফল চেষ্টা চালাই,,যাদের গাড়ি আছে তারা গাড়ীতেই ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়,,কিন্তু আমার তো গাড়ি নেই,,আমি কি করবো এতো ঠান্ডায়,,শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছি,,আল্লাহ আজকে রাত টা যাতে বেচে থাকতে পারি। পুরো বাটে পরে গেছি,,না সামনে আগাতে পারি,,না পেছোনে যেতে পারি, একটি গ্যারাজ এর সিঁড়ীর কোনায় যায়গা করে নেই,,আল্লাহর রহমতে কোনরকমে রাতটা পার করি। সকালে ভাবলাম হোটেল তো খালি নেই চলে যাই,, যাবো মানালী,তাও রাস্তা বন্ধ,,মনটা একেবারে ভেংগে গেছে। ভাবলাম দিল্লীই চলে যাই,, তারপর শেষ চেষ্টা করে,,আরও ১০-১৫ টা হোটেল এ যাই, কোথাও রুম খালি নেই,,একটি ভালো মানের হোটেল পাই, তারা বলে কেই চেক আউট করলে রুম দেয়া যাবে,,তারপর ১১ টা বাজে রুম দেয় তারা,,কিন্তু বলে রুম সুপার ডিলাক্স ভাড়া ৩০০০রুপি,,আর শুধু ডিলাক্স নিলে ২৫০০ রুপি,,আমরা ভিউ ভালো দেখার জন্য ৩০০০ রুপি দিয়েই রুম নেই,,রুম আসোলেই সুপার ডিলাক্স। ওইখানের স্থানীয় একজন বল্লো ১৯৯০ এর পর নাকি এত টানা স্নোফল নাকি এই ২০১৭ তে হল,,সিমলা এত সুন্দর লাগছিলো যা কল্পনারো বাইরে। ৮ তারিখ সিমলাতেই থাকি,,৯ তারিখ সকাল ১০ টায় হোটেল থেকে বের হই,পুরাতন বাস স্টান্ড থেকে ১৫ রুপি দিয়ে নতুন বাস স্টান্ড যাই,,মানালীর জন্য সরকারী বাস এ উঠি,,সিমলা টু মানালী কোন ভলভো নাকি চলে না,সরকারী বাস ও ভালো,,একদম ড্রাইভার এর পাসের সিট এ বসি,,ভিউ দেখার জন্য,,আহ এত ভালো লেগেছিলো,,কুল্লু পৌছাতে সন্ধ্যা ৬ টা বেজে যায়,, অইদিন আর মানালী যাই নি,,কুল্লু তেই ৬০০ রুপি দিয়ে হোটেল নেই। ১০ তারিখ সকালে কুল্লু থেকে মানালী জাই,মাত্র ১ ঘন্টা লাগে, ৪০ রুপি ভাড়া,, মানালী তে হোটেল নেই ৪০০রুপি ভাড়া,, ব্লোয়ার এর খরচ আলাদা ৩৫০ রুপি,,মোট ৭৫০ রুপি,ব্লোয়ার রুম গরম রাখে,,কিন্তু -১১ ডিগ্রি তাপমাত্রা কি আর ব্লোয়ার মানে,,১০তারিখ মানালী শহর ঘুরি আর কেনাকাটা করি,,১১ তারিখ বিকেল ৪.৩০ এর টিকিটও করে রাখি মানালী টু দিল্লী,১১৫০ রুপি নিয়েছিলো। ১১ তারিখ সকালে ২০০০ টাকা দিয়ে জিপ ভাড়া করি সোলাং ভ্যালী যাবার জন্য,,সোলাং ভ্যালী দেখে মনে হলো পুরো ট্যুর এর টাকা উসুল হয়ে গেছে । এত সুন্দর,,সুবহানআল্লাহ। তারপর কিছুখন ঘুরি বিয়াস নদী,, আরেকটি সূন্দরতম স্থান। ৩ টা বাজে হোটেল থেকে চেক আউট করি,২০০রুপি অতিরিক্ত দিতে হয়েছিলো,,আগেই কথা বলে নিয়েছি,,১১ তারিখ ৪.৩০ এর ভলভো তে উঠি,,১২ তারিখ ভোর ৬ টায় দিল্লী পৌছাই,৬.৩০ এ দিল্লীর সেই আগের হোটেল এ যাই,, ৫০০ রুপি ভাড়া,,পরের দিন আগ্রা যাবার কথা ছিলো তাজমহল দেখার জন্য,,যদি ও আমি আগেও তাজমহল দেখেছি,,কিন্তু আমার সাথে যে বন্ধু ছিল সে দেখেনি তাই,,কিন্তু তার দুর্ভাগ্য পরের দিন ১৩ তারিখ শুক্রবার তাজমহল বন্ধ,,তাই আর দেরি না করে সাথে সাথেই দিল্লী স্টেশন এ গিয়ে ১৪ তারিখের রিটার্ন টিকেট অইদিন ই ১২ তারিখ এর ই করে ফেলি,,,৭.৩০ এর দুরন্ত ৪ ঘন্টা লেটে ১১.৩০ এ ছেড়েছে, পরের দিন ১৩ তারিখ সন্ধায় কলকাতা পৌছাই,,৬০০ রুপি দিয়ে নিউমার্কেট এর পাশে হোটেল নেই,,১৪ তারিখ পুরোটা ঘুমাই আর কেনাকাটা করি,,১৫ তারিখ ভোর ৬.৩০ এর বাসে চড়ে ২৮০ রুপি ভাড়া দিয়ে বর্ডার এ যাই,, ইমিগ্রেশন পার হয়ে ৫৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকা আসি। কলকাতায় দুইদিন থাকি ১২০০ রুপি ভাড়া লেগেছে।

আমরা ২ জন ছিলাম তাই হোটেল ভাড়া আমার আর অর ভাগে আধা আধা পরেছিলো,,খাবার এ আমাদের প্রচুর টাকা গিয়েছে,,খেয়ে নয় খাবার বেশির ভাগ নস্ট করে,, ওদের খাবার খাওয়া একটু কষ্টকর ছিলো আমাদের দুইজনের জন্য,,টাই খাবারে টাকা একটু বেশী গিয়েছে,,কখনো বেশী কখনো কম,,যাই খাবেন দাম জিজ্ঞেস করে খাবেন,আমাদের কলকাতা থেকে আবার কলকাতা আসা পরজন্ত ১৫৫০০ রুপির মত খরচ হয়েছে।
তবে এই ট্যুর আরও অনেক অনেক কমে দেয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি,,১২-১৩ হাজার টাকাতেও সম্ভব। কিন্তু একটু কষ্ট করতে হবে।
শুভ হোক আপনাদের যাত্রা।
আবারো বলছি,লেখায় ভুল হলে মাফ চেয়ে নিচ্ছি।

লেখকঃ Iqbal Hossain‎