স্টর্ম ফ্রন্ট : একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
স্টর্ম ফ্রন্ট

স্টর্ম ফ্রন্ট
বইয়ের নাম: স্টর্ম ফ্রন্ট
লেখক: জিম বুচার
অনুবাদ: তানজীম রহমান
সিরিজ: ড্রেসডেন ফাইলস
ধরণ: ফ্যান্টাসি/মিস্ট্রি
প্রকাশকাল: জুলাই ২০১৬
প্রকাশনী: বাতিঘর
প্রচ্ছদ: ডিলান
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৫৬
মুদ্রিত মূল্য: ২৪০ টাকা

কাহিনী সংক্ষেপ: শিকাগো শহরের একমাত্র জাদুকর গোয়েন্দা হ্যারি ড্রেসডেন। হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে দেয়া, অতিপ্রাকৃত ঘটনার তদন্ত করা বা কোনো অতিপ্রাকৃত বিষয়ে পরামর্শ ও উপদেশ দেয়াই তার কাজ। যেসব কেসে পুলিশের পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে রহস্যের জট খোলা সম্ভব হয় না, সেসব কেসেও ডাক পড়ে জাদুকর গোয়েন্দা হ্যারি ড্রেসডেনের।

এক সকালে ড্রেসডেনের অফিসে শিকাগো পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের পরিচালিকা ক্যারিন মারফির ফোন আসলো। শহরের ম্যাডিসন হোটেলে দু’জন মানুষ খুবই নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তাদের একজন কলগার্ল জেনিফার স্ট্যানটন, অন্যজন কুখ্যাত গ্যাংস্টার জন মার্কোনের দেহরক্ষী টমি টম। মৃতদেহের বীভৎসতা দেখে কারোই আর সন্দেহ রইল না, এটি একটি অস্বাভাবিক খুন। ঘটনাস্থলে পৌছে গেলো ড্রেসডেন। লাশ পরীক্ষা করেই সে বুঝতে পারলো, এই খুনে কোনো এক জাদুকর কালো জাদু ব্যবহার করেছে। কিন্তু ড্রেসডেনের পক্ষে কোনভাবেই এই খুনের তদন্তে জড়ানো সম্ভব নয়। কারণ, তার উপর ঝুলছে ডুম অব ড্যামোক্লিস। জাদুবিদ্যার কোনো এক নিয়ম ভাঙার কারণে তার উপর এই অভিশাপ নেমে আসে। যদি ভুলেও সে আর কোনো নিয়ম ভেঙে ফেলে, তাহলে সাথে সাথেই তাকে মৃত্যুদন্ড দেবে হোয়াইট কাউন্সিল।

একসময় মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করেই খুনীকে রুখতে তদন্তে নেমে পড়ে ড্রেসডেন। আর এরপরই একের পর এক বিপদ ঘনিয়ে আসতে থাকে তার উপর। কিন্তু এসব করেও যখন ড্রেসডেনকে থামানো যাচ্ছিল না, তখনই খুনী সিদ্ধান্ত নেয় তাকেও একইভাবে কালো জাদু ব্যবহার করে খুন করা হবে। কিন্তু কে সেই খুনী?

কেন হচ্ছে এসব খুন? গ্যাংস্টার জন মার্কোন এর সাথেই বা এর সম্পর্ক কি? একদিকে ড্রেসডেনকে তদন্ত থেকে রুখতে তৎপর গ্যাংস্টার জন মার্কোন, আরেকদিকে তাকে খুন করতে প্রস্তুত খুনী জাদুকর, আবার অন্যদিকে ড্রেসডেনকে সামান্যতম ভুলের জন্যও মৃতুদন্ড দিতে প্রস্তুত হোয়াইট কাউন্সিলের প্রতিনিধি মরগ্যান – ড্রেসডেন কি পারবে এই সকল বাঁধা অতিক্রম করে খুনগুলোর রহস্যভেদ করতে? নাকি তার আগেই ঘনিয়ে আসবে তার মৃত্যু?

পাঠ প্রতিক্রিয়া: এক কথায় বলতে গেলে, বইটা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে। জাদুকর হ্যারি ড্রেসডেনের বুদ্ধিদীপ্ত গোয়েন্দাগিরি, পদে পদে বিপদে পড়া আর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জাদুর ব্যবহার – সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য একটি বই। সাধারণত ফ্যান্টাসি, হরর বা কোনো টুইস্ট-সাসপেন্স ছাড়া এডভেঞ্চার বই কখনোই আমার ভালো লাগে না। কিন্তু এই বইটা পড়ার সময় এতটাই ভালো লাগছিল যে একটানা দুইবার পড়েই শেষ করে ফেলেছি। আমার ধারণা ছিল হয়ত তদন্তগুলোও জাদুবিদ্যার ব্যবহারের মাধ্যমে হবে। তবে সেগুলো বাস্তবসম্মতভাবে হওয়াতেই বেশি ভালো লেগেছে। আর জাদুকর হ্যারি ড্রেসডেনকে এতটাই ভালো লেগেছে যে বলার ভাষা নেই। একদিকে সে যেমন একজন তুখোড় গোয়েন্দা, তেমনি অন্যদিকে সে একজন আদর্শবান জাদুকর। কোনো অবস্থাতেই সে জাদুবিদ্যার কোন নিয়ম ভাঙতে রাজি নয়। সব মিলিয়ে হ্যারি ড্রেসডেন অসাধারণ একটি চরিত্র। অন্যান্য চরিত্রগুলোর মধ্যে আমার কাছে ড্রেসডেনের পোষা বিড়াল মিস্টারকে বেশি ভালো লেগেছে। ১৫ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির বিড়াল মিস্টারের চলাফেরা ও প্রভাবশালী আচরণে মনে হয়েছে যেন মিস্টারই হ্যারির কর্তা।

এবার অনুবাদের প্রসঙ্গে আসি। অনুবাদক তানজীম রহমান বইটির দুর্দান্ত অনুবাদ করেছেন। পড়ার সময় আসলেই মনে হয়নি যে অনুবাদ পড়ছি। সহজ, সাবলীল ও ঝরঝরে অনুবাদ। কোথাও কোনো কাঠখোট্টা ভাষা, দুর্বোধ্য শব্দ বা জটিল বাক্যের ব্যবহার নেই। এজন্য অবশ্যই অনুবাদকের প্রশংসা প্রাপ্য। তবে একান্ত যদি সমালোচনা করতেই হয়, তাহলে “ব্যাজার” শব্দটি আমার কাছে বেশ অপ্রচলিত লেগেছে। যেসব জায়গায় শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার কয়েকটি জায়গায় অন্য কোনো সমার্থক শব্দ ব্যবহারের সুযোগ ছিল। তবে এজন্য পড়তে মোটেও খারাপ লাগেনি। এছাড়া বইটিতে শুধু “হ্যাঁ” এর পরিবর্তে “হ্যা” ছাড়া তেমন কোনো বানান ভুলও চোখে পড়েনি।

সবশেষে একটা মজার ঘটনা বলি। “দ্য সার্জন” বইটির রিভিউ লেখার সময় জেনেছিলাম “স্টর্ম ফ্রন্ট” এর উৎসর্গের মধ্যে একটি গভীর রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এজন্য বইটি পড়া শুরু করার আগেই উৎসর্গ পাতাটি দেখেছিলাম। পড়তে পড়তে নিচের দিকে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ! অনুবাদক বাতিঘরের সকল ভাইকে উৎসর্গ করতে গিয়ে হয়ত খেয়াল করেননি সেখানে একজন নারীও রয়েছেন। এজন্যই তিনি আর সব লেখক/অনুবাদকদের মত অনুবাদিকা Saanta Riki আপুকেও “ভাই” বলে ফেলেছেন।
#ব্যক্তিগত_রেটিং: ৪.৭/৫
#অনুবাদ_রেটিং: ৫/৫

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে